সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার - সেরা ২টি নিয়ম
কিসমিস একটি উচ্চ প্রোটিন ও চিনি জাতীয় খাদ্য। শুকনো কিসমিস খাওয়ার অনেক উপকারিতা ও নিয়ম রয়েছে। আজকে আর্টিকেলে আমরা জানব সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হয়, 12 টি কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার দুটি নিয়ম।
এছাড়াও আরো প্রয়োজনীয় বিষয় যেমন কিসমিস খেলে কি মোটা হয়, দুধের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা,প্রতিদিন কিসমিস খেলে কি হয়,প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত, ইত্যাদি সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হয়
দেহকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। কিসমিস একটি মিষ্টি জাতীয় খাদ্য, এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় তা বিস্তারিত জেনে নেইঃ
- পেটের জন্য সহায়কঃ ১০০ গ্রাম কিসমিসের মধ্যে রয়েছে ৩.৭ গ্রাম ফাইবার। ফাইবার আমাদের পেটকে সুস্থ রাখে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- রক্তস্বল্পতা রোধঃ১০০ গ্রাম কিসমিসে রয়েছে 1.88 মিলিগ্রাম আইরন,০৩২ মিলিগ্রাম।এইসব উপাদান আমাদের দেহের লৌহ রক্তকণিকা বৃদ্ধি করে।
- গ্যাস্ট্রিক কমাতে সহায়কঃ কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের পেটেরগ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ কিসমিসে পটাশিয়ামের উপস্থিতি ও সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অল্প পরিমাণে হওয়াতে প্রতিদিন কিসমিস খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে হার্ট সুস্থ থাকে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকার উপরেও প্রতিদিন কিসমিস খেলে রক্ত চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে।
- দাঁত ও মুখে সুরক্ষাঃ নিচে থাকা লিনোলেনিক এসিড ও ফাইটোকেমিক্যাল মুখের ভিতরে ব্যাকটেরিয়া দূর করে মুখ ও দাঁত সুস্থ রাখে।
- ত্বকের সুরক্ষাঃ কিসমিসে রয়েছে ভিটামিন সি, জিংক সেলিনিয়াম সমন্বিত ক্রিয়ার মাধ্যমে ত্বককে সুস্থ রাখে।
- দেহে শক্তি সরবরাহঃ দেহে দ্রুত শক্তি সঞ্চালনের জন্য কিসমিস কার্যকরী একটি খাদ্য।
শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়
কিসমিস একটি মিষ্টি জাতীয় খাদ্য।আঙ্গুর ফল শুকানোর পরে কিসমিস তৈরি হয়।প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে যেমন প্রতি 100 গ্রামে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট 79.18 গ্রাম, ফ্যাট ০.৪৬ গ্রাম, ২৯৯ কিলো ক্যালরি শক্তি, ক্যালসিয়াম ৫০ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২৯৯ মিলি গ্রাম, পটাশিয়াম ৭৪৯ মিলি গ্রাম, ফসফরাস ১০১ মিলিগ্রাম ইত্যাদি। শুকনো কিসমিসের উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জেনে নিনঃ
- দ্রুত দেহে শক্তি যোগান দিতে সাহায্য করে
- রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
- হারকে মজবুত করতে সাহায্য করে।
- হজমের সমস্যা দূর করে দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে।
- হার্টকে সুস্থ রাখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
- চোখের দৃষ্টি শক্তির জন্য অনেক উপকারী।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- দেহে ইনফেকশনের ঝুঁকি কমায়
- দেহে কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে ফেলে।
- দেহকে সুস্থ ও ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
কিসমিস খেলে কি মোটা হয়
কিসমিস একটি মিষ্টি জাতীয় পুষ্টিগুণে ভরপুর প্রোটিন খাদ্য। এতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, লোহ সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। পরিমাণের থেকে বেশি কিসমিস খেলে ওজন বাড়তে পারে যেমন প্রতিদিন নূন্যতম একমত পরিমাণে কিসমিস খেতে হবে। কিসমিসে প্রচুর ক্যালরি ও চিনি রয়েছে যা দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। আপনি যদি ওজন বৃদ্ধি করতে চান প্রতিদিন 300 থেকে 500 ক্যালোরি অতিরিক্ত গ্রহণ করতে হবে।
এটি আপনি ১০০ গ্রাম কিসমিসের মধ্যে পেয়ে যাবেন। ১০০ গ্রাম কিসমিসে প্রায় ২৯৯ গ্রাম ক্যালরি থাকে। তাই বোঝা যায় যে কেউ কিসমিস অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি হয়ে যাবে। আপনি যদি প্রতিদিন ১০০ গ্রাম কিসমিস খেয়ে থাকেন তার সাথে অতিরিক্ত কমপক্ষে 10 থেকে 20 গ্রাম বেশি গ্রহণ করুন তাহলে আপনার ওজন খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
তবে যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা ওজন বৃদ্ধি করার জন্য কিসমিসের সাহায্য ছাড়া অন্য কোন মাধ্যম বা উপায় অবলম্বন করুন।
12 টি কিসমিস এর উপকারিতা ও অপকারিতা
কিসমিস একটি পুষ্টি গুণে ভরপুর খাদ্য এতে প্রচুর প্রোটিন ক্যালসিয়াম উপাদান রয়েছে যা আমাদের দেহের জন্য অনেক উপকারী। কোন মানুষ যদি অধিক পরিমাণে কিসমিস গ্রহণ করে এতে তার শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।আসুন জেনে নিই কিসমিস খেলে কি কি উপকারিতা ও অপকারিতা পাওয়া যায়ঃ
কিসমিস এর উপকারিতাঃ
- চিকন ও রোগা মানুষদের ওজন বৃদ্ধি করতে প্রচুর সহায়ক
- কিসমিস একটি উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাদ্য।
- কিসমিস আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
- কিসমিস আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- আমাদের দেহের রক্তশূন্যতা কমাতে কিসমিস অনেক সহায়ক।
- হজম শক্তি ভালো করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- কিসমিস আমাদের ত্বক ও দাঁত সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- কিসমিস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- কিসমিস খেলে যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পাবে।
- শরীরের দূষিত এসিড বের করতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা থেকে রক্ষা করে।
- পেটের বায়ুর সমস্যা দূর করে।
- কিসমিসে থাকা উচ্চ ক্যালরি ও চিনি ওজন বৃদ্ধি করে।
- কিসমিসে অতিরিক্ত ফাইবার থাকার কারণে ডায়রিয়ার সমস্যা হয়ে থাকে।
- অনেকের কিসমিসে এলার্জি থাকতে পারে।
- অধিক পরিমাণে কিসমিস খেলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
- আমাদের রক্ত পাতলা তারা কিসমিস খেলে ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
- কিসমিস শিশুদের জন্য বিপদজনক তাদের শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি হতে পারে।
- নিয়মিত অধিক পরিমাণে কিসমিস খেলে অস্বাস্থ্যকর জনিত সমস্যা হতে পারে।
- কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে চিনি যা অধিক পরিমাণে খেলে ডায়াবেটিসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- কিসমিসে অধিক ফাইবারের কারণে বেশি খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিবে।
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার ২টি নিয়ম
সাধারণত কিসমিস ভিজিয়ে খাবার ২টি নিয়ম রয়েছে। ২টি নিয়মে কিভাবে কিসমিস ভিজিয়ে খেতে হয় তা বিস্তারিত জেনে নিনঃ
- নরমাল পানিঃএটি খুব একটি সাধারণ পদ্ধতি রাতে ঘুমানোর আগে ১৫ থেকে ২০ পিচ কিসমিস অথবা এক মুঠো কিসমিস সাধারণ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিসমিস গুলো বের করে নিয়ে কিসমিসগুলো ভালোভাবে ধুয়ে খেয়ে ফেলুন এবং কিসমিস ভেজানো পানিটা পান করুন।
- হালকা গরম পানিঃ এটিও খুব সাধারন একটি পদ্ধতি রাতে ঘুমানোর আগে পানিটি ফুটিয়ে নিন তারপর সেই ফুটোনো পানিতে ২০ থেকে ৩০ পিচ কিসমিস ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিসমিস এবং পানি আবার হালকা গরম করে নিন তারপর সেটি খালি পেটে খেয়ে ফেলুন। খাওয়ার পরে প্রায় আধা ঘন্টা অন্য কোন খাদ্য খাবেন না । এই পদ্ধতিতে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন খেলে অনেক উপকারিতা পাবেন।
প্রতিদিন কিসমিস খেলে কি হয়
- দ্রুত দেহে শক্তি যোগান দিতে সাহায্য করে
- রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
- হারকে মজবুত করতে সাহায্য করে।
- হজমের সমস্যা দূর করে দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে।
- হার্টকে সুস্থ রাখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
- চোখের দৃষ্টি শক্তির জন্য অনেক উপকারী।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- দেহে ইনফেকশনের ঝুঁকি কমায়
- দেহে কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে ফেলে।
- দেহকে সুস্থ ও ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার - সেরা ২টি নিয়ম
সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার দুইটি নিয়ম রয়েছে। খুবই সাধারণ দুটি নিয়ম এই পদ্ধতিতে সকালে খালি পেটে কিসমিস ভিজিয়ে খেলে অনেক উপকারিতা পাবেন। চলুন সে পদ্ধতি দুটি সম্পর্কে জেনে নিনঃ
- নরমাল পানিঃএটি খুব একটি সাধারণ পদ্ধতি রাতে ঘুমানোর আগে ১৫ থেকে ২০ পিচ কিসমিস অথবা এক মুঠো কিসমিস সাধারণ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিসমিস গুলো বের করে নিয়ে কিসমিসগুলো ভালোভাবে ধুয়ে খেয়ে ফেলুন এবং কিসমিস ভেজানো পানিটা পান করুন।
- হালকা গরম পানিঃ এটিও খুব সাধারন একটি পদ্ধতি রাতে ঘুমানোর আগে পানিটি ফুটিয়ে নিন তারপর সেই ফুটোনো পানিতে ২০ থেকে ৩০ পিচ কিসমিস ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিসমিস এবং পানি আবার হালকা গরম করে নিন তারপর সেটি খালি পেটে খেয়ে ফেলুন। খাওয়ার পরে প্রায় আধা ঘন্টা অন্য কোন খাদ্য খাবেন না । এই পদ্ধতিতে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন খেলে অনেক উপকারিতা পাবেন।
দুধ কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
কিসমিস এবং দুধ দুটি পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাদ্য। এই দুটি খাদ্য একসাথে খেলে যে উপকারিতা পাবেন তা অপরিসীম। এই দুটি পুষ্টিকর খাদ্য একসাথে খেলে দেহের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। কিসমিসে ভিটামিন ফাইবার ইত্যাদি খনিজ গুলো অনেক ভালো একটি উৎস । অপরদিকে দুধ প্রোটিন ক্যালসিয়াম ইত্যাদি প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে।
এ দুটির মিশ্রণ একসাথে খেলে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং চর্বি গুলোর সুষম মিশ্রণ হয়ে থাকে। এর ফলে এই দুটির মিশ্রণ খেলে আপনার দেহের শক্তির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হারকে মজবুত করে, নতুন মাসেল ও পেশি গঠন করে, খাদ্য চাহিদা পূরণ করে, দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করে।
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত
কিসমিস একটি উচ্চ প্রোটিন ও চিনি জাতীয় খাদ্য। এটি খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে তবে পরিমাণ এর থেকে বেশি খেলে অনেক ক্ষতি সম্মুখীন হতে পারেন। একজন সাধারণ মানুষের দিনে এক কাপ থেকে চার কাপ অথবা 40 গ্রাম খেতে পারেন। কিসমিসে যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা হলোঃ
- ফাইবারঃ ৩ গ্রাম
- পটাশিয়ামঃ ২৩৫ মিলিগ্রাম।
- ক্যালোরিঃ ১২০
- ভিটামিন বি৬ঃ ০.১ মিলিগ্রাম।
- আইরনঃ ১.৩ মিলিগ্রাম।
- ম্যাঙ্গানিজঃ ০.৩ মিলিগ্রাম।
লেখকের মন্তব্যঃ
আজকের আর্টিকেল থেকে জানতে পারলাম কিসমিস আমাদের দেহের জন্য পুষ্টিকর একটি খাদ্য যা আমাদের দেহের অনেক উপকারে আসে। কিসমিস খাবার অনেক নিয়ম রয়েছে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। উপরোক্ত সকল বিষয় মেনে কিসমিস খাওয়ার চেষ্টা করুন।
এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। আমরা নিয়মিত এই ওয়েবসাইটে এইরকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করে থাকি আপনারা এরকম তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন ।আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করছি এবং আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url