চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম পুষ্টিগুণ ও ১৬টি উপকারিতা
চিয়া সিড পুষ্টিগুণে ভরপুর খাদ্য উপাদান এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। চিয়া সিড খেলে যেমন উপকার রয়েছে ঠিক তেমন কিছু ক্ষেত্রে সাবধানতা রয়েছে। আজকে আমরা জানবো চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম পুষ্টিগুণ ও ১৬টি উপকারিতা, বাচ্চাদের চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম।
তাছাড়া আরো জানবো আজকে আর্টিকেল থেকে চিয়া সিড বাংলা নাম,কোন সময় খেতে হয়,গর্ভবতী মহিলা ও কিডনি রোগীর চিয়া সিড কতটি উপকারী ও উপকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
বাচ্চাদের চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
বাচ্চাদের চিয়া সিড সতর্কতার সাথে খাওয়াতে হবে। বাচ্চাদের গলায় এই বীজ আটকে যেতে পারে। চিয়া সিড বাচ্চাদের খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন, অথবা খাওয়ানোর দুধের সাথে মিশিয়ে চিয়া সিড খাওয়াতে পারেন। তবে অধিক ছোট এক বছর বা তার কম বাচ্চাদের না খাওয়ানোই ভালো।
বাচ্চাদের সর্বনিম্ন আধা চা চামচ থেকে সর্বোচ্চ ১ চা চামচ পর্যন্ত চিয়া সিড খাওয়ানো যাবে।সব থেকে উত্তম উপায় হল বিলিন্ডারে পিষে গুড়া করে অন্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো। বাচ্চাদের চিয়া সিড খাওয়ানোর উপকারিতা গুলো হলঃ
- বাচ্চাদের দেহের অতিরিক্ত পদার্থের চাপ কমিয়ে থাকে।
- বাচ্চাদের হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- বাচ্চাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
- ভালো ঘুম নিশ্চিত করে।
- দেহের প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে।
- শিশুদের মেধা বিকাশ করে থাকে।
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার ১৬টি উপকারিতা
আমাদের দেহে বিভিন্ন উপাদানের ঘাটতি রয়েছে এইসব ঘাটতি পূরণ করতে চিয়া সিড এর ভূমিকা ও অপরিসীম। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার উপাদান, আপনি প্রতিদিন সকালে চিয়া সিড খেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
আপনার দেহের অতিরিক্ত ওজন ও মেদ কমাতে সাহায্য করবে।এছাড়া পেটের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে থাকে। চিয়া সিড এ রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিংক, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি খনিজ উপাদানে ভরপুর।
- চিয়া সিড দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক কার্যকরী।
- চিয়া সিড দেহের অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণ করে।
- চিয়া সিড হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- এই বীজ আমাদের দেহের হারকে মজবুত রাখতে সহায়তা করে।
- দেহের অতিরিক্ত কোলেস্ট্রল কমাতে সাহায্য করে।
- চিয়া সিড খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- দেহে ডায়াবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- চিয়া সিড হওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়।
- চিয়া সিড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- আমাদের দেহের ভালো ঘুম নিশ্চিত করে।
- দেহের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
- দেহের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
- চিয়া সিড আমাদের দেহের চুল ত্বক নখ ইত্যাদি সুন্দর করতে সাহায্য করে।
- প্রোটিনের ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করে।
- আমাদের দেহের ফ্যাটি অ্যাসিড দূর করতে সাহায্য করে।
- শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে সাহায্য করে ।
চিয়া সিড এর বাংলা নাম
বাংলা কোন আভিধানিক শব্দ বা নাম নেই,বাংলাদেশ সহ বেশ কিছু দেশে এটি চিয়া বীজ নামে পরিচিত। চিয়া বীজের জন্ম হয় আমেরিকান মহাদেশ মেক্সিকোতে। এটি “Salvia Hispanica” নামক প্রজাতির গাছের একটি বীজ।এই চিয়া বীজ বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে ছোট, ধূসর, বাদামি, সাদা, কালো। চিয়া বীজ অনেক পুষ্টি উপাদানের ভরপুর এবং প্রচুর উপকারিতা রয়েছে।
চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভাল
চিয়া সিড পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি খাদ্য। প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম ইত্যাদি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিয়া সিড খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কিডনি সমস্যা আক্রান্ত রোগী।সুতরাং কিডনি সমস্যা আক্রান্ত রোগীদের যদি চিয়া সিড খেতে হয় তবে কিছু সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করে খেতে হবে। যেমনঃ
- কিডনি রোগীদের খাওয়ার নিয়মঃচিয়া সিড খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। চিয়া সিড দৈনিক এক চা চামচ এর বেশি খাওয়া উত্তম নয়।পানিতে ভিজিয়ে চিয়া সিড খাওয়া উচিত। গুড়ো করে চিয়া সিড খাওয়া ভালো।এই নিয়ম ফলো করে কিডনি রোগী চিয়া সিড খেলে উপকার পেতে পারে।
- কিডনি রোগীদের চিয়া সিড খাওয়ার সাবধানঃ চিয়া সিড প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস রয়েছে ।ফসফরাসের মাত্রা কিডনি রোগীদের রক্তে সীমিত রাখা জরুরি। ফসফরাসের মাত্রা অধিক হয়ে গেলে ক্যালসিয়াম রক্তনালীতে জামা হতে পারে। ফসফরাসের পাশাপাশি চিয়া সিড এ অধিক পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। পটাশিয়াম কিডনি রোগীর শরীর থেকে সঠিকভাবে বেরোতে না পারলে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি হতে পারে। পটাশিয়ামের মাত্রা কিডনি রোগীদের জন্য নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। পটাশিয়ামের মাত্রা রক্তে বেড়ে গেলে প্যারালাইসিস ও মাংস পেশি দুর্বল হয়ে যাবে।চিয়া সিড এ অধিক পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, অতিরিক্ত ফাইবারের ফলে হজম শক্তির সমস্যা সৃষ্টি হয়।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিডে যেমন উপকার দিক রয়েছে, ঠিক তেমনি অধিক পরিমাণে খেলে অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে।গর্ভবতী মহিলাদের সাবধানতার সাথে পরিমাণ মতো চিয়া সিড খেলে অনেক উপকার পেতে পারে।গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিন এক কাপ পানিতে, এক থেকে দুই টেবিল চা চামচ চিয়া সিড নিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে মিশ্রিত পানি সহ খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
১০০ গ্রাম চিয়া সিড খেলে প্রায় ২০ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।অর্থাৎ এক চামচ খেলে প্রায় তিন গ্রামের মতো প্রোটিন পাওয়া যাবে। ফলে চিয়া সিড এ বিদ্যমান আয়রন ও ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলার জন্য অনেক উপকারী।আপনি যে কোন সময় যে কোন খাবারের সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে খেতে পারেন। সন্তানের জন্য মায়েদের প্রায় প্রতিদিন ৫০০ ক্যালরি শক্তির প্রয়োজন হয় দুধ খাওয়াতে।
প্রায় ২৮ গ্রাম চিয়া সিডে ১৩৮ ক্যালোরি সরবরাহ করে। সুতরাং গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্যকর ক্যালরি পেতে খাবারের তালিকায় চিয়া সিড যুক্ত করুন। খেলে গর্ভবতী মহিলার দুধে ডি এইচ এ কনটেন্ট বাড়িয়ে তোলে যা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।
চিয়া সিড খাওয়ার সময়
চিয়া সিড খাওয়ার কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। আপনি যেকোনো সময় আপনার প্রয়োজনে পরিমাণ মতো চিয়া সিড খেতে পারে। তবে শতভাগ ও উপকার পেতে বিশেষজ্ঞদের মতে নির্দিষ্ট কিছু সময় রয়েছে যা অন্য সময়ের তুলনায় অধিক ভালোভাবে কাজ করে।রাতে ঘুমানোর আগে খাওয়ার পর অথবা সকালে খালি পেটে খাওয়ার উপযুক্ত সময়।
চিয়া সিড সাধারণ তাপমাত্রায় খাওয়া ভালো, স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এক গ্লাস পানিতে দুই চা চামচ চিয়া সিড প্রায় ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে দিন সাথে লেবুর রস যুক্ত করুন। এই পদ্ধতিতে চিয়া সিড খেলে অধিক উপকার পাবেন এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম পুষ্টিগুণ ও ১৬টি উপকারিতা
চিয়া সিড একটি পুষ্টিগুণীয় উপাদান ভরপুর খাদ্য। এতে বিদ্যমান রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, প্রোটিন সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ইয়াসির খাওয়ার ফলে দেহে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জেনে নিনঃ
- চিয়া সিড দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক কার্যকরী।
- চিয়া সিড দেহের অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণ করে।
- চিয়া সিড হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- এই বীজ আমাদের দেহের হারকে মজবুত রাখতে সহায়তা করে।
- দেহের অতিরিক্ত কোলেস্ট্রল কমাতে সাহায্য করে।
- চিয়া সিড খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- দেহে ডায়াবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- চিয়া সিড হওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়।
- চিয়া সিড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- আমাদের দেহের ভালো ঘুম নিশ্চিত করে।
- দেহের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
- দেহের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
- চিয়া সিড আমাদের দেহের চুল ত্বক নখ ইত্যাদি সুন্দর করতে সাহায্য করে।
- প্রোটিনের ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করে।
- আমাদের দেহের ফ্যাটি অ্যাসিড দূর করতে সাহায্য করে।
- শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে সাহায্য করে ।
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে চাইলে সর্ব প্রথমে আপনাকে একটি রুটিন এর মধ্যে আসতে হবে। অতিরিক্ত খাদ্যাভ্যাস দূর করতে হবে। চিয়া সিড কে ওজন কমানোর সাহায্যকারী হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে একটি খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। প্রতিদিন সকালে বা রাত্রে ঘুমানোর আগে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এক গ্লাস পানির সাথে ২ চা চামচ চিয়া সিড ভিজিয়ে রেখে, সাথে দুই চামচ লেবুর রস যোগ করতে হবে।
প্রতিদিন ঠিক একই নিয়মে এই মিশ্রণটি খেলে দ্রুত ওজন কমাতে পারবেন। চিয়া সিড নিজস্ব কোন সাদ না থাকাই আপনি যে কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন, এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে অল্প খাওয়ার ফলে আপনার ক্ষুধা নিবারণ হয়ে যাবে। দ্রুত ওজন কমাতে ব্যায়ামের পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় চিয়া সিড যুক্ত রাখুন।
বিশেষজ্ঞদের মধ্যে প্রতিদিন প্রায় ১০০ গ্রাম চিয়া সিড খাওয়া দেহের জন্য প্রয়োজনীয়। চিয়া সিড হজম শক্তি বৃদ্ধি করে,ক্যালোরের ঘাটতি কমিয়ে মেদ কমায়।
লেখকের মন্তব্য
আজকের আর্টিকেলে চিয়া সিড সম্পর্কে যেসব তথ্য জানানো হলো সে সকল বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয় চিয়া সিড যেমন উপকারী একটি খাদ্য ঠিক তেমনি সঠিক নিয়মে না খাওয়ার ফলে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে ।এজন্য সকল সাবধানতা গুলি অবলম্বন করে সঠিক পুষ্টিগুণ গ্রহণ করব।
এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। আমরা নিয়মিত এই ওয়েবসাইটে এইরকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করে থাকি আপনারা এরকম তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন ।আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করছি এবং আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url