মানসিক রোগী চেনার সহজ উপায়
মানসিক রোগ নিয়ে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে অনেকে মনে করে এটা কোন রোগ নয়। কিন্তু মানসিক রোগ একটি জটিল সমস্যা। আজকে আমরা জানবো মানসিক রোগের চেনার উপায়, মানসিক রোগীর লক্ষণ সমূহ, মানসিক রোগের তালিকা ও প্রকারভেদ ও মানসিক রোগ থেকে মুক্তির ১০টি উপায়।
আজকে আটিকেলে উপরোক্ত বিষয় ছাড়াও আরো বেশ কিছু বিষয়ে আমরা জানবো যেমন মানসিক রোগ থেকে মুক্তির আমল মানসিক রোগীর ওষুধ কতদিন খেতে হয় মানসিক রোগের চিকিৎসা ইত্যাদি চলুন বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেই।
মানসিক রোগের ১৪ টি লক্ষণসমূহ
কোন মানুষের মধ্যে মানসিক রোগীর লক্ষণ দেখা দিলেই সে ব্যক্তি মানসিক রোগে আক্রান্ত বিষয়টি এমন নয়। তবে দীর্ঘদিন যাবত যদি মানুষের ভিতরে সেই লক্ষণগুলো স্থায়ীভাবে থাকে তবে বিষয়টি লক্ষণীয়। চলুন দেখি দীর্ঘদিন যাবত যে ১৪ টি লক্ষণ সমূহ দেখা দিলে বুঝতে পারব সে মানসিক রোগে আক্রান্তঃ
- নিজেকে অনেক দিন ধরে সবার কাছে থেকে আলাদা সরিয়ে রাখা
- দীর্ঘ সময় প্রায় দুই সপ্তাহ মতো মন খারাপ থাকা
- সাধারণ বিষয় নিয়ে সবার সাথে ঝগড়া করা
- মাঝে মাঝে হঠাৎ করে অনেক বেশি উত্তেজিত হয়ে যাওয়া।
- একেবারেই অপরের সাথে কথা বলতে না চাওয়া।
- গায়েবী কথা বা শব্দ শুনতে পাওয়া।
- কারণে মানুষকে সন্দেহ করা।
- নিজের প্রতি যত্ন না নেওয়া, গোসল করা দাঁত মাজা ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজ থেকে নিজেকে বিরতি রাখা।
- আনন্দদায়ক কাজে আনন্দ না পাওয়া।
- সামাজিক কার্যকলাপ বা সমাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলা।
- নিজেকে সব সময় দোষী মনে করা।
- সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারা বা নিজেকে অক্ষম মনে করা বা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া।
- ঘুম অতিরিক্ত হওয়া বা কমে যাওয়া।
- নিজের কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
মানসিক রোগ থেকে মুক্তির দশটি উপায়
মানসিক রোগ একটি স্বাভাবিক রোগ এটি অধিকাংশ মানুষেরই হয়ে থাকে। তবে মানসিক রোগ নিয়ে বেশি উত্তেজিত হওয়া উচিত নয় এতে উপকারের থেকে ক্ষতি বেশি হয়। উত্তেজিত না হয়ে সব পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসাকরানোই উত্তম কাজ। চিকিৎসার পাশাপাশি যে দশটি উপায়ে মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পাবেন তা জেনে নিনঃ
- প্রথমে একজন অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করা।
- সব সময় নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখা।
- পুষ্টিকর ও সুস্বাস্থ্য খাবার গ্রহণ করা।
- প্রতিদিন নিজের দেহ অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো।
- নিজের ধর্মীয় কাজ বা শান্তিপূর্ণ কাজে নিজেকে মনোনিবেশ করা।
- প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করা।
- একটি আদর্শ রুলস অনুযায়ী নিজের জীবন যাপন করা।
- নিজের পরিবার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন ও সমাজের মানুষের সাথে মেলামেশা করা।
- বিভিন্ন নেশা ধূমপান ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
- অধিক রাগ কন্ট্রোল করে সকলের সাথে সুন্দর আচরণ করা।
মানসিক রোগ থেকে মুক্তির ৯টি আমল
মানসিক রোগ একটি জটিল সমস্যা তবে এটি মুক্তির জন্য চিকিৎসা রয়েছে। চিকিৎসার পাশাপাশি অনেক আমল করে মানসিক সমস্যা ঠিক করতে পারবেন। চলুন দেখি মানসিক রোগ থেকে মুক্তির যে নয়টি আমল রয়েছেঃ
- নিজের সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করা।
- বেশি বেশি নিজের ধর্মীয় কিতাব বা কোরআন তেলাওয়াত করা।
- এখলাস ঠিক রাখা।
- সৃষ্টিকর্তার নিয়ামত নিয়ে চিন্তাভাবনা করা।
- সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা রাখা।
- ধৈর্য ধারণ করা।
- নেক ও সৎ আমল করা।
- সৃষ্টিকর্তার জিকির করা।
- বেশি বেশি তাওবা ও ইস্তেগফার করা ইত্যাদি।
মানসিক রোগের ওষুধ কত দিন খেতে হয়
মানসিক রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হবে এ বিষয় নিয়ে অনেকে অনেক রকম ভাবে চিন্তিত থাকে। তবে এ বিষয় নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনি কি ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত তার ওপরে ভিত্তি করে আপনাকে ওষুধ খেতে হবে এবং কতদিন খাবেন তা বুঝতে পারবেন। চলুন দেখি কি ধরনের মানসিক রোগ হলে কতদিন ওষুধ খেতে হয়ঃ
মানসিক রোগ একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। অনেক ক্ষেত্রে এই রোগের রোগীর চিকিৎসা করতে এক মাস,ছয় মাস বা সারা জীবন লেগে যেতে পারে। এই সব কিছু বিষয় নির্ধারণ করা হয় আপনি কি রকম মানসিক রোগের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছেন। এই রোগ থেকে বেরিয়ে আসতে শুধু ওষুধ নয় বিভিন্ন রকম থেরাপিরও প্রয়োজন রয়েছে, মানসিক শারীরিক পরিবর্তন, এবং একটি ভালো সাপোর্ট সিস্টেম প্রয়োজন রয়েছে।
এই সকল বিষয়ের মাধ্যমে যখন আপনি নিজেকে সুস্থ ও স্বাবলম্বী মনে করবেন। ডাক্তারের সাহায্য বা ঔষধ ছাড়াই সুস্থতা ফিল করবেন, সাহায্য ছাড়াই একা দিন কাটাতে সক্ষম হবেন, তখন ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কিন্তু এই সময়টা আপনার চিকিৎসক ঠিক করে দিবেন।
দুই ধরনের মানসিক রোগের চিকিৎসা
মানসিক রোগ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। বিভিন্ন মানসিক রোগের বিভিন্ন রকম চিকিৎসা হয়ে থাকে। মানুষের রোগের চিকিৎসার মধ্যে দুই ধরনের চিকিৎসা জানানো হলোঃ
মানসিক রোগের চিকিৎসা রোগীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনী একটি বিষয়। হতে পারে কোন থেরাপি,কাউন্সিলিং বা ওষুধ ইত্যাদির মাধ্যমে। কারণ সকলেরই মনের সুস্থতার প্রয়োজন রয়েছে। আর মন দুটি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত মন ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকে অথবা শরীর ভালো থাকলে মন ভালো থাকে ।
মানসিক রোগী সাধারণত দুই প্রকারঃ
নিউরোসিসঃ এটি একটি মৃদু মানসিক সমস্যা যেমন অল্পতে রেগে যাওয়া,বিষন্নতা ইত্যাদি এই জাতীয় সমস্যা কে নিউরোসিস জাতীয় সমস্যা বলা হয়। নিউরোসিস জাতীয় সমস্যাগুলো বিভিন্ন কাউন্সিলিং বা আশেপাশের মানুষের সাহায্যে ভালো হয়ে জাই।থেরাপি সময়মাফিক দেয়া হয়।
সাইকোসিসঃ এইটি জটিল প্রকৃতির মানসিক রোগ। যেমন বাইপোলার ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, হাইপারটেনশন ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে এ জাতীয় রোগী সারা জীবন ওষুধ খেতে হয়। এই জাতীয় রোগী সবসময় ডাক্তারের পরামর্শে থাকা উচিত।
মানসিক রোগের টি ৯টি তালিকা ও প্রকারভেদ
মানসিক রোগ অনেক ধরনের হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগের বিভিন্ন রকম লক্ষণ ও চিকিৎসা রয়েছে। নিচে মানসিক রোগীর নয়টি তালিকা প্রকারভেদ দেওয়া হলোঃ
- উদ্বেগ জনিত ব্যর্থঃ সাধারণ উদ্বেগ ব্যাধি,বিচ্ছিন্ন উদ্বেগ ব্যাধি
- ডিসোসিয়েটিভ ডিসঅর্ডার
- মেজাজ ব্যাধিঃমূল সমস্যা, বিঘ্নিত মেজাজ।
- ট্রিমা এন্ড স্ট্রেস সম্পর্কিত ব্যাধিঃতীব্র স্ট্রেস, দীর্ঘায়িত শোক।
- নিউরো ডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারঃ বুদ্ধিজীবী অক্ষমতা, ভাষার ব্যাধি ।
- ঘুম জাগরণ ব্যাধিঃ অনিদ্রা, রাতের ভয়।
- নিউরো কগনিটিভ ডিসঅর্ডারঃ প্রলাপ, ঘা সংক্রান্ত মস্তিষ্কের আঘাত ইত্যাদি।
- পদার্থ সম্পর্কিত এবং আসক্তিমূলক ব্যাধিঃ পদার্থের নেশা, অ্যালকোহল, গাজা ইত্যাদি।
- যৌন কর্মহীনতাঃ বিলম্বিত বীর্যপাত, যৌন উত্তেজনার ব্যাধি।
মানসিক রোগী চেনার সহজ উপায়
কোন মানুষের ভেতরে মানসিক রোগীর লক্ষণ দেখা দিলেই সে মানুষটি মানসিক রোগে আক্রান্ত বিষয়টি এমন নয়। যখন কোন মানুষের ভেতরে দীর্ঘদিন যাবত মানসিক রোগীর লক্ষণগুলো থাকবে বা তার ভিতরে মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন আসবে। তখন তাকে প্রাথমিকভাবে বিবেচিত করা হবে সে মানসিক রোগী। চলুন দেখি কিভাবে মানসিক রোগী চেনা যায়ঃ
কোন মানুষের মধ্যে মানসিক রোগীর লক্ষণ দেখতে পাওয়ার মানে এই নয় যে, সে মানসিক রোগে আক্রান্ত। কারণ মানুষের মন মানসিকতা সব সময় একই রকম থাকে না পরিবর্তন ঘটে। মানুষের মন ভাল খারাপ হতেই পারে এটা স্বাভাবিক। আমরা একজন মানসিক রোগীকে তখনই মানসিক রোগী হিসেবে বিবেচিত করবো যখন দীর্ঘদিন যাবত তার মধ্যে এই লক্ষণ গুলো দেখা দিবে।
দীর্ঘদিন যাবত কোন মানুষ যখন তার জীবনের স্বাভাবিক কাজগুলো অস্বাভাবিকভাবে করবে তখন মানসিক সমস্যার পাশাপাশি শারীরিক ভাবে কিছু পরিবর্তন দেখা দিবে। আবার অনেক সময় মানসিক সমস্যার কারণে শারীরিক সমস্যা হয়ে থাকে। এজন্যই এ বিষয়টি বলা হয় মানসিক রোগীর লক্ষণ দেখা দিলেই মানুষ মানসিক রোগী নাও হতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
উপরোক্ত বিষয় থেকে আমরা বুঝতে পারলাম কোন মানুষের ভেতরে মানসিক রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই সে মানুষটি মানসিক রোগে আক্রান্ত নয়। বরং দীর্ঘদিন যাবত যদি সেই ব্যক্তির ভেতরে মানসিক রোগীর লক্ষণগুলো দেখা দেয় তখন তাকে প্রাথমিকভাবে মানসিক রোগী হিসেবে বিবেচিত করা হবে। এছাড়াও আমরা জানলাম মানসিক রোগীর চিকিৎসা,মানসিক রোগীর লক্ষণ সমূহ ও মানসিক রোগীর রোগ থেকে মুক্তির উপায়।
এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। আমরা নিয়মিত এই ওয়েবসাইটে এইরকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করে থাকি আপনারা এরকম তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন ।আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করছি এবং আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url